চকরিয়ায় পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা

রাজু দাশ, চকরিয়া :


কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় ফল কাঁঠালের হলদে রঙের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা বাজার গুলোতে। সারাবছরই ফলটি কম-বেশি বাজারে পাওয়া গেলেও চলতি এ মৌসুমকে ঘিরে জমে উঠেছে কাঁঠাল বাজারের বেঁচা-কেনা।

বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার কাঁঠাল। গাছ থেকে কেউ পাড়ছেন, কেউ খাচ্ছেন, কেউ বা আবার বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। চকরিয়া উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।

শনিবার (৪ জুন) চকরিয়া বিভিন্ন বাজার ঘুরে সরেজমিনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাজারের পাইকারি আড়ৎদার থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে চৌকিতে কিংবা ভ্যানে করে বিক্রি করছে কাঁঠালের ব্যবসায়ীরা। আকারভেদে নানান আকৃতির কাঠালগুলো বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন দামে। চারিদিকে এরই মধ্যে পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

চকরিয়া আবদুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল ফলের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন বাইরে থেকে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কাঁঠাল নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, পটুয়াখালী, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের নানা জেলা থেকে এখানে কাঁঠাল আসে। সুস্বাদু ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়। আড়ৎ থেকে ভ্যান এবং রিকশা চালকরা এ সময় শুধু কাঁঠাল আনা-নেওয়ার কাজ করে থাকেন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই দেখা যায় মহাসড়কের ওপর ট্রাকের বহর। বিভিন্ন আড়ৎতের সামনে থেকে লাইন ধরে ট্রাকগুলোতে কাঁঠাল তোলা এবং নামা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, বাজারে কাঁঠালের মৌসুমে প্রতিদিন দিনে রাতে বিক্রি হয় হাজার হাজার কাঁঠাল। সব সময়ই কাঁঠালের বেচা-কেনা চলে। তবে জমজমাট থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কক্সবাজার জেলার দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন চকরিয়া ফলের আড়ৎ। নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকায়।
বাগান থেকে বাজারে আনা, কেনা-বেচা, গাড়িতে ওঠানো-নামানোসহ বাজারটিতে বিভিন্ন কাজ করে শত শত লোক। এই বাজারে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাইকারদের থাকা-খাওয়ার অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার কারণে পৌরসভা কাঁচা বাজার ফলের আড়ৎ হয়ে উঠেছে কাঁঠালের সবচেয়ে বড় বাজার।

পৌর শহরে বাসটার্মিনাল সংলগ্নে ভরামুহুরী কাঁঠাল ব্যবসায়ী মাহমুদ উল্লাহ বলেন, কাঁঠালের হলদে রঙের রসালো কোষ ও চমৎকার স্বাদ-গন্ধের জন্য ফলটি খুবই জনপ্রিয়। এর চাহিদা সাধারণ মানুষের বেশী। আড়ৎ থেকে খুচরা দামে কাঁঠাল কিনে বাজারে বিক্রি করি। প্রতিটি কাঁঠাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে কিনেছি। এই মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সংসার চালায়। অন্যন্য বছরের চেয়ে এ বছর কাঁঠাল কেনাবেচা ভালো হচ্ছে।

কাঁঠাল কিনতে আসা আইয়ুব খান জানান, আমি কয়েকটি কাঁঠাল কিনতে আসলাম। বৃষ্টির দিনে কাঁঠালের চাহিদা একটু বেশী। পরিবারে ও আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠাবো, তবে দাম যাই হোক বিষমুক্ত কাঁঠাল নিশ্চিত করে কিনব।

পৌর শহরে কাঁচা বাজার ফলের আড়ৎে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসা আমির হোসেন জানান, আমি ৫শ কাঁঠাল বিক্রি করতে এনেছি। গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কাঁঠাল চড়া দামে কেনায় এবার তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। একশ কাঁঠাল ৭ হাজার টাকায় কিনেছি। পরিবহন খরচ বাবদ এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। তবে কাঁঠাল বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজ লক্ষ্য করা গেছে গ্রামের সাধারণ বিক্রেতাদের মাঝে।

আবদুল হামিদ পৌরসভা বা টার্মিনাল কাঁচাবাজার আড়ৎদার মিজবাহ উদ্দীন জানান, প্রতিদিন বাজারে চাহিদার থেকে বেশি কাঁঠাল আসছে। ব্যবসায়ীরা কাঁঠালের স্তূপ নিয়ে বসে আছেন। কেউ বিক্রি করছেন পাইকারি, আবার কেউ খুচরা। গত বছর চেয়ে এবার কাঁঠালের দাম কম। প্রতিটি কাঁঠাল পাইকারি দামে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় কিনতে হয়। খুচরা বাজারে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে এ বাজার থেকে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক কাঁঠাল কক্সবাজার জেলা সহ বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। এছাড়াও গাড়িতে কাঁঠাল লোড-আনলোডসহ অন্যান্য কাজে অন্তত শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত থাকায় শ্রমিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে।###